অগ্রহায়ণের শেষ দিন থেকে পৌষের শেষ দিন অবধি রাঢ় বাংলার গ্রামে গ্রামে এই টুসু পূজিত হন। গ্রামের একান্নবর্তী পরিবারের মেয়েরা বা দু-চারটি ছোট ছোট পরিবারের মেয়েরা একসাথে জড়ো হয়ে প্রতি সন্ধ্যায় শুরু করে টুসু আরাধনা। এ দিন মাঠ থেকে নতুন ধানের একটা গোছা মাথায় করে আনেন পাড়ার মেয়েরা। কুমোরদের বিশেষ কায়দায় তৈরি পোড়া মাটির খোলায় ধানের তুষ দিয়ে তার উপর গাঁদাফুল সাজিয়ে তৈরি করা হয় টুসুখোলা। সন্ধ্যা হলে অবিবাহিত মেয়েদের দল তুষের উপরে রাখে আলো-চাল, দূর্বাঘাস, সর্ষে, বাসক, আকন্দের মতো ফুল। তার পরে পাত্রটিকে হলুদ টিপ পরিয়ে পিঁড়ির উপরে বসিয়ে বাড়ির উঠোনে রেখে প্রদীপ জ্বালিয়ে তার চারদিকে বসে শুরু হয় গানের ঐক্যতান। দেবীর উদ্দেশে চিঁড়ে, গুড়, বাতাসা, মুড়ি, ছোলা ইত্যাদি ভোগ নিবেদন করেন। পাড়ার অবিবাহিত মেয়েরা সন্ধ্যায় এক সঙ্গে টুসু গান গেয়ে তাঁদের সুখ দুঃখের কথা বলে। যোগ দেয় বাড়ির কচিকাঁচা থেকে বয়স্কা মহিলারাও। পৌষের শেষ চার দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই চার দিনের প্রথম দিনকে বলা হয়ে থাকে চাউড়ি। এ দিন বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হয় চালগুড়ি। বাড়ির মেয়েরা গোবর মাটি দিয়ে উঠোন নিকোন। দ্বিতীয় দিন বাউড়ি। সে দিন তৈরি হয় নানা আকারের, নানা পিঠে। রাত জাগতে হয়। সব বাড়ি আলোয় সেজে ওঠে।
No comments:
Post a Comment